করোনায় রাত-দিন অসহায় মানুষের পাশে নাটোরের তরুণ প্রজন্মের মানবতার ফেরিওয়ালা টুটুল

বিশেষ (নাটোর) প্রতিনিধি: স্বাধীনতার পর থেকে দেশে এনজিও কার্যক্রম শুরু হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিতে গরিব মানুষের জীবন যখন বিপর্যস্ত, সে সময় গরিব-দুঃখী মানুষকে সহায়তার নামে এনজিওরা এ দেশে কাজ করতে আসে।

প্রথম প্রজন্মের এনজিওগুলো এ কারণে তাদের কার‌্যাবলি গরিব মানুষকে সহায়তা প্রদান এবং তাদের স্বাবলম্বী হতে স্বল্পসুদে ঋণদান কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ রাখে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায়ল লকডাউনে কর্মবিমুখ হয়ে পড়েছিল জেলার অন্তত কয়েক লাখ মানুষ। এসব মানুষের খাদ্যের জোগান চলছে সরকারি খাদ্য সহায়তায়। জেলায় প্রায় ৫০টি এনজিওর কার্যক্রম চললেও হতদরিদ্র এসব মানুষের পাশে তারা কেউ ছিলনা । পত্র-পত্রিকায় বা আমাদের চারপাশে করোনায় গৃহবন্দি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে এনজিওগুলোর তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি।

আমি বলব না যে, কেউই এ কাজ করছেন না। যেমন সল্প পরিসরে হলেও নাটোরে হতদরিদ্র মানুষের পাশে ছিল এবং আছে সম্প্রীতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি একটি সংগঠন।

করোনার শুরু থেকে সমিতির সদস্য ও অসহায় মানুষকে সরকারি নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করাসহ ১০ দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন সম্প্রীতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি ।

রোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে সবাই কমবেশি সংকটে। অনেক এনজিও বা সমবায় সমিতি এ পরিস্থিতিতেও জোর করে কর্মকর্তা ও কর্মচারী দিয়ে কাজ করাচ্ছে। অনেকে ব্যয় কমাতে কর্মচারী ছাঁটাই করছে বা তাঁদের অর্ধেক বেতন দিচ্ছে। আবার অনেকেই বেতন দিচ্ছেনা ।

এর মধ্যেও ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করেছে নাটোরের সম্প্রীতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির নির্বাহী পরিচালক আসাদুজ্জামান টুটুল । ইতিপূর্বে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আগাম সতর্কতার অংশ হিসেবে ” সম্প্রীতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমবায় সমিতি” ২০ জন স্টাফকে মার্চ মাসের বেতন দিয়ে ছুটি দিয়েছিলেন সংস্থাটি ।

আপদকালীন সময়ে যারা বাসায় অবস্থান করবে তাদের পুরস্কার হিসেবে প্রতিদিন জন্য সম্মানী ভাতা প্রদানের ঘোষণা দেন । একই সাথে ১৮ মার্চ থেকে সমিতির চার শতাধিক সদস্যের কিস্তি বন্ধ ঘোষণা দেন এবং যতদিন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে সদস্যদের কিস্তি দিতে হবেনা। বরং আপদকালীন সময়ে সমিতির সদস্যদের সকল প্রকার সহযোগিতা করবে প্রতিষ্ঠানটি।

ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে সংস্থাটি ১ হাজার কর্মহীন মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন ।করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে গত ২৪ মার্চ থেকে সংস্থাটি ছুটি। কিন্তু শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন-ভাতা অগ্রিম প্রদান করেন ।

সম্প্রীতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমবায় সমিতিতে কর্মরত ২০ জন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয় এপ্রিল মাসের পুরো বেতন সহ ঈদ বোনাস এবং চাকরি না হারানোর নিশ্চয়তা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আসাদুজ্জান টুটুল ।

অগ্রিম বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়ার বিষয়ে বলেন, আমি সংস্থাটি শুরু করার সময় মাত্র ১০ জন সদস্য । এখন সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪০০ । সব কিছুর পিছনে আমাদের এই কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবদান ।এই দুঃসময়ে কীভাবে তাঁদের অবদান অস্বীকার করব? তাদের হাতে টাকা নেই। মার্চের বেতন খরচ হয়ে গেছে।

অফিস বন্ধ থাকায় এখন তাঁদের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর। এপ্রিলের বেতনটা হাতে থাকলে সংকটে পড়বেন না ’তিনি বলেন, মালিক নয়,একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তাদের এই দুর্ভোগ আমাকে ব্যথিত করেছে। তাই বেসরকারী একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদের বেতন ভাতা এবং ঈদ বোনাস দিয়েছি ।

কখনো দিনের আলোয় আবার কখনো রাতের আঁধারে চলছে ত্রান তৎপরতা। অসহায় মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত এমন-কি করোনায় আক্রান্তদেরও দিয়ে যাচ্ছেন ত্রাণ সহায়তা। করোনাভাইরাসের শুরুর দিক থেকে এখন পর্যন্ত নাটোরবাসী এক যুবকের এই কার্যক্রম চোখের সামনে দৃশ্যমান।

ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এই যুবকের নামের সাথে যুক্ত করেছেন ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’। ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেয়া এই তরুণ মানবতার ফেরিওয়ালার নাম আসাদুজ্জামান টুটুল। তিনি সম্প্রীতি ক্ষুদ্র সঞ্চয় সমবায় সমিতির প্রধান নির্বাহী ও নাটোর জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ । নাটোর শহরের উপশহর এলাকার বাসিন্দার।

জানা গেছে, দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম দিক থেকে নিজ এলাকার মানুষকে সচেতন করতে কাজ শুরু করেন এই তরুণ । প্রথমে নিজ এলাকা অর্থাৎ পরে পুরো জেলা শহরে জীবাণুনাশক স্প্রে করেন বেশ কয়েকদিন তারপর হ‍্যান্ডস‍্যানিটাজার বানিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করেন।

করোনার শুরুর পর প্রথম তিনি তার প্রতিষ্টানের সাড়ে চারশ সদস্যের কিস্তি নেয়া অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন এবং প্রতিষ্টানের ২০ কর্মকর্তা কর্মচারীকে অগ্রিম পুরো মাসের বেতন প্রদান করে ছুটি দিয়ে দেন। সেদিন তিনি ঘোষণা করেন করোনা সংকটকালে তিনি সংগঠনের সদস্যদের পাশে থাকবেন। যেই কথা সেই কাজ তিনি করোনা পুরোটা সময় জুড়ে সাড়ে ৪ শ সদস্যের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌচ্ছে দিয়েছেন।

দিয়েছেন ঈদের খাদ্য সামগ্রী। করোনাকালে নাটোরের হাট বাজার দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুরু করেন এই তরুণ । কবে এর শেষ এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে তিনি বলেন, চলমান এই শঙ্কট শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে এই কার্যক্রম।করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে দেখা দেওয়ার সময় থেকেই আসাদুজ্জামান টুটুল মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।

মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে ছুটে চলেছেন এবং একের পর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।সেসবই আমাদের জানা।রোজার আগে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন দিয়েছেন। ঈদের বাজার পৌচ্ছে দিয়েছেন অসহায় মানুষের বাসায় বাসায়।

সমাজ সেবায় নিয়োজিত এই তরুণ প্রজন্মের আইকন হিসেবে পরিচিত, তার আরেকটি বিশেষ পরিচয় রয়েছে, নাটোর জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির কোষাকোষাধ্যক্ষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তিনি অনেকগুলো সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছেন, তরুন সংগঠক ও নাটোরের বিভিন্ন সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনগুলো উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

করোনায় কাজ করা সংগঠনের মধ্যে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রচন্ড প্রচারবিমুখ মানুষ আসাদুজ্জামান টুটুল। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ান মনোযন্ত্রণার আপন তাগিদে।

জানা গেছে, এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস এই দুযোগে পৌরসভা ও উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে প্রায় ২0০০পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

তার এই কার্যক্রম দেখে দেশ-বিদেশের অনেক পরিচিতরা আরো উৎসাহ দিচ্ছেন!

সমাজসেবায় নিয়োজিত এই তরুনে উদ্যোমী কার্যক্রম দেখে গত একমাসে থেকে ফেসবুকে তাকে অনেকেই আখ্যা দিচ্ছেন `মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, সেহরির সময়ও ফোন পেয়ে নিজের বাসায় রান্না করা খাবার বক্সে ভরে নিয়ে দিয়েছেন অনেক পরিবারে। এমন প্রশংসনীয় কাজে তার নামের পাশে মানবতার ফেরিওয়ালা শব্দটি বেশ মানায় বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যক্তি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জান টুটুল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, কেউ ইনবক্সে সাহায্যের আবেদন করলে রাতের আধারে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে, এমনকি ঈদ দিনওএই কার্যক্রম চালু ছিল।সম্প্রীতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমবায় সমিতি নির্বাহী পরিচালক টুটুল বলেন, প্রচারের জন্য নয় মূলত সমাজের একজন সচেতন মানুষ হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা আর মনোযন্ত্রণার আপন তাগিদে করেছি । যা অব্যাহত থাকবে । দেশের ক্রান্তি লগ্নে সবাই কে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে ।

এছাড়া তিনি বলেন, সকল সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা যদি এই দূর্যোগে এগিয়ে আসেন, তাহলে এ দেশের কোন মানুষ না খেয়ে থাকবে না বলে মন্তব্য এই যুবকের। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে তিনি বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (নাটোর) প্রতিনিধি মো. নাসিম উদ্দিন নাসিম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.