ওয়েনাড় নাকি রায়বরেলি, সংশয়ে রাহুল

 

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (লোকসভা) দ্বিতীয় ধাপে কেরালার ওয়েনাড় আসন থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। আসনটিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে ২৬ এপ্রিল।
ওয়েনাড়ের পর কংগ্রেস রাহুলকে প্রার্থী করেছে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলি আসন থেকে। ৩ মে রায়বরেলি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন রাহুল।
কংগ্রেসের দাবি, ওয়েনাড়ের পাশাপাশি রায়বরেলি থেকেও জিতবেন রাহুল। কিন্তু, এখানেই রাহুলের সংসদীয় নির্বাচন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ এখন রাহুলের কাছে এই পরিস্থিতি। নিয়ম বলে, কোনো ব্যক্তি একসঙ্গে দুটো আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু উভয় আসনে জিতলে যে কোনো একটা আসন ছেড়ে দিতে হবে জয়ী সংসদ সদস্যকে।
২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের আমেঠিতে কংগ্রেসের হাওয়া নড়বড়ে বুঝে দল রাহুলকে প্রার্থী করে ওয়েনাড় আসনে। ওয়েনাড়ে কংগ্রেসের পাশাপাশি সমর্থন দিয়েছিল ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ। ২০১৯ সালের ফল প্রকাশ হতেই দেখা যায়, অমেঠিতে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে রাহুলকে হারিয়ে দিয়েছেন বিজেপির স্মৃতি ইরানি। কিন্তু ওয়েনাড়ে ৭ লাখের বেশি ভোট জয় পান রাহুল।
ফলে এখন প্রশ্ন হল, রাহুল যদি দুই আসন থেকে জয় পান, তাহলে কোন আসন ত্যাগ করবেন তিনি। আর যেই আসন তাকে ছেড়ে দিতে হবে সেখানে উপনির্বাচনে অন্য কেউ জয় পাবে। ফলে রাহুল যদি ওয়েনাড় ছেড়ে রায়বরেলির আসন ধরে রাখেন, তাহলে মুসলিম লিগের সাথে বিশ্বাসঘতকতা হবে। সেখানে মুসলিম লিগ নানা দাবিতে সুর চড়াবে। কারণ বিপদে তারাই সমর্থন দিয়েছে। আবার রায়বরেলি ছাড়লে তৈরি হবে উত্তরপ্রদেশ এবং পরিবারপন্থী কংগ্রেসের একাংশর সাথে মতবিরোধ।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে গোটা উত্তরপ্রদেশ থেকে মাত্র একটা আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। সেটা হল রায়বরেলি। ফলে রায়বরেলি গান্ধী পরিবারের কাছে সম্মানের আসন। এদিকে ওয়েনাড়ের স্থানীয়রা বলছেন, বিপদের আসল বন্ধু কেরালার ওয়েনাড়। অমেঠিও তো গান্ধী পরিবারেরই আসন ছিল। গত নির্বচানে ওয়েনাড় না থাকলে রাহুলের সংসদে যাওয়া হতো না। অনেক বেশি ভোটে রাহুলকে সংসদে পাঠিয়েছিল ওয়েনাড়। তাহলে ওয়েনাড়ের সঙ্গে এরকম বঞ্ছনা কেন?
কেরালাবাসীর অভিমত, যে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ধুয়েমুছে যাচ্ছে, সেই উত্তরপ্রদেশ নিয়ে তারা এত মরিয়া, অথচ কেরালা কংগ্রেসকে এতটা শক্তি জোগালেও তাদের অবস্থা দুয়োরানির মতো কেন হবে? আর এর জেরেই রাহুল গান্ধী উভয়সংকটে পড়েছেন। যে কারণে দীর্ঘ টালবাহানার পর একপ্রকার দলের চাপে রায়বরেলি মেনে নিয়েছেন রাহুল।
তবে সবটাই দাঁড়িয়ে আছে রায়বরেলিতে রাহুলের জেতার ওপর। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ-সহ একের পর এক বিজেপি নেতারা রায়বরেলিতে হাইভোল্টেজ প্রচারে নেমেছেন। মোদি কংগ্রেস নেতা রাহুলকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ডরো মাত, ভাগো মাত (ভয় পেয়ে পালিয়ে যেও না)।
যদিও এ নিয়ে পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, রাহুল বেশ করেছে দুই জায়গায় দাঁড়িয়েছে, তাতে তোমার (মোদি) কী? তুমিও তো দুই জায়গা থেকে দাঁড়িয়েছ।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে মোদিও একইসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর পাশাপাশি গুজরাটের বরোদরা থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। বারাণসীতে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ভোটে জয় পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জিতলে পরে বরোদরা ছেড়ে দেন মোদি। উপনির্বাচনে বরোদরায় জেতেন রঞ্জনাবেন ভট্ট।
কিন্তু, রায়বরেলি আর বরোদরা এক নয়। কংগ্রেসের অন্দরেও নেতারা এটা মানছেন। কার্যত স্বাধীনতার পর থেকেই রায়বরেলি গান্ধী পরিবারের একরকম নিজস্ব আসন। দেশের প্রথম নির্বাচনে রায়বরেলি থেকে জিতে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন ফিরোজ গান্ধী। এরপর ইন্দিরা গান্ধী রায়বরেলি থেকে জিতেছেন চারবার। একমাত্র ১৯৭৭ সালের জনতা দলের কাছে হেরেছিলেন ইন্দিরা। পরে আবার ১৯৮০ সালে রায়বরেলি ইন্দিরার কাছে ফেরত আসে। তার মৃত্যুর পর রায়বরেলি থেকে সঞ্জয় গান্ধী, পরে রাজীব গান্ধী। পরবর্তীতে ২০০৪ থেকেই রায়বরেলিতে জিতে আসছেন সোনিয়া গান্ধী। এবার রাহুল। ফলে এই আসন জয়ে পেয়ে ছেড়ে দেওয়া মানে রাহুল যেন পরিবার ছেড়ে দিল! #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.