উত্তর গাজার সব বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উত্তর গাজায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে ইসরায়েল। হামলায় সেখানকার সব বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে ৬০ জন নিহত, এনিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছুঁইছুঁই।
অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনায় ইরান যুক্ত রয়েছে।
জানা গেছে, ড্রোন ও যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে উত্তর গাজার সীমান্তবর্তী শহর ও গ্রামগুলো যেমন বেইত লাহিয়া, জাবালিয়া ও বেইত হনুন এর সব আবাসিক বাড়িঘর ও ভবন ধ্বংস করে দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। একই ধরনের হামলা চলছে গাজা সিটি সংলগ্ন এলাকাগুলোতেও। এসব এলাকায় ইউরোপীয় হাসপাতালের আশপাশে স্থল অভিযান চালানোয় বেশি মনোযোগ দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে সোমবার দিনভর ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গোলাবর্ষণে ফিলিস্তিনের গাজার উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৬০ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩৮৮ জন। সোমবার সন্ধ্যার পর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 
নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৪ জন দক্ষিণ রাফাহতে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর ত্রাণকেন্দ্রের কাছে প্রাণ হারিয়েছেন। এদিন গাজার মধ্যাঞ্চলে জিএইচএফের একটি ত্রাণকেন্দ্রে সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর ফের গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত দুই জন নিহত এবং ৯২ জন আহত হয় বলে জানা গেছে।
এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই দক্ষিণ রাফাহতে জিএইচএফের অন্য এক ত্রাণকেন্দ্রের সামনে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলায় ১৪ জন নিহত হন। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবারের পর ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৪ হাজার ৯২৭ জনে। এদের পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৭ জন ফিলিস্তিনি। 
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা। হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ঐ দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। কিন্তু বিরতির দুই মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত আড়াই মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৪৯ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১৪ হাজার ৫৭৪ জন।
যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েক বার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছে।
ইতিমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়। এদিকে সম্প্রতি গাজায় ফের দুই মাসের যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই প্রস্তাবনায় নেতানিয়াহু সম্মতি দিলেও হামাস এখন অনুমোদন করেনি।
এদিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জিম্মির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতায় জড়িত রয়েছে ইরান।
সোমবার এমন দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এখন বিশাল সমঝোতার একটা ইস্যু হচ্ছে গাজা। আর সত্যি বলতে কী, ইরান এতে জড়িত রয়েছে। দেখাই যাক, গাজা বিষয়ে কী হয়। তবে জিম্মিদের বিষয়ে কোনো আপসের পরিকল্পনা নেই তার।
তিনি বলেন, জিম্মিদের আমরা ফেরত চাই। ইরানের ভূমিকার ব্যাপ্তি নিয়ে ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু বলেননি। এ বিষয়ে আরও কিছু তথ্য জানতে চাইলে হোয়াইট হাউজ ও নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধির কার্যালয় থেকেও কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.