খুলনা ব্যুরো:জঙ্গি সংগঠন ইসকনের সমাবেশ বন্ধে প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে হেফাজতে ইসলাম ১৩ তারিখে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে সমাবেশ ডাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এ ঘোষণা দেন।
উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন “ইসকন” কর্তৃক রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ড, মুসলিম আইনজীবীকে দিবালোকে হত্যা. মসজিদ ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধ এবং ইসকনের সকল কর্মকান্ড নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, খুলনা জেলা শাখা এ সংবাদ সম্মেলন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় হেফাজতে ইসলাম খুলনা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া বলেন, দেশের পরিবেশ পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে, ছাত্র জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে বহুবিধ যড়যন্ত্র চলছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্র এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করতে যড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। দেশে সাম্প্দায়িক সংঘাত ছড়িয়ে দিতে ইসকন(ইন্টারন্যাশনাল সােসাইটি ফর কৃষ্ন কনশাসনেস) নামক একটি সন্ত্রাসী গােষ্ঠী ঘােলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বামী প্রভূপাদ নতুন ধরনের হিন্দু সংগঠন চালু করতে প্রথমেই তাতে বাধা দিয়েছিলাে মূল ধারার সনাতন হিন্দুরা। অধিকাংশ হিন্দুই তার বিরুদ্ধাচারণ শুরু করে। কিন্তু সেই সময় স্বামী প্রভুপাদের পাশে এসে দাড়ায় জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স, ল্যারি শিন ও টমাস হপকিন্স-এর মত চিহ্নিত ইহুদী-খ্রিস্টান এজেন্টরা। ব্তমানে এই সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী ১০০টিরও বেশি দেশে সক্রিয়।
ইসকনের কাজের কিছু নমুনা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সনাতন মন্দিরগুলাে দখল করা এবং সনাতনদের পিটিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার কাজের নজির ইসকনদের রয়েছে। ঢাকার স্বামীবাগের মন্দিরটি আগে সনাতনদের ছিল, পরে ইসকনরা কেড়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া পঞ্চুগড়েও সনাতনদের পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করে ইসকনরা। ঠাকুরগাও-এ সনাতন হিন্দুকে হত্যা করে মন্দির দখল করে ইসকন। এ ছাড়া অতি সম্প্রতি সিলেটের জগন্নাথপুরে সনাতনদের রথযাত্রায় হামলা চালিয়েছে ইসকন নেতা মিন্টু ধর। চট্টগ্রামে হিন্দু প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘ ইসকনকে ধর্ম বিরােধী পেশী শক্তি, উগ্রবাদী এবং সাধুবেশী সন্ত্রাসী বলেছিল। ২০১৪ সালে ঢাকাস্থ স্বামীবাগে মসজিদের তারাবীর নামাজ বন্ধ করে দিয়েছিল ইসকন। ২০১৬ সালে সিলেটে মসজিদের ইমাম খুন করে, ইসকন মন্দির হতে পাশ্ববর্তী মসজিদে গুলি করে। জাতীয় হিন্দু মহাজোট, জাগাে হিন্দু, বেদান্ত, ইত্যাদি বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরি করে, উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটানাের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তারা।
মাওলানা আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া বলেন,আগামী ১৩ ডিসেম্বর, খুলনার সাকিট হাউস ময়দানে ইসকন সম্মেলন করতে চাচ্ছে। যে সাকিট হাউস ময়দান আমাদের খুলনাবাসীর নামাজের স্থান। যেখানে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, সেই মাঠে ইসকন নামক উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠন সম্মেলন করবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। তাদেরকে কোনােভাবে-ই খুলনার সাকিট হাউস ময়দানে সম্মেলন করতে দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রশাসন যদি তাদের প্রোগ্রাম বন্ধ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় এবং এর ফলে কোনো অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে, তাহলে এর সব দায়ভার প্রশাসনকে-ই বহন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের কিছু মিডিয়া ও রাজনীতিবিদদের মিথ্যা বানোয়াট প্রোপাগান্ডা ছড়াতে দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে আজ বাংলাদেশ বিরোধী মিথ্যা অবান্তর প্রোপাগান্ডা ও অতিরঞ্জিত ভুল তথ্য প্রচার করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে ভারতীয় সরকারের উচিত দ্রুত তা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে আমরা বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে অধিক সংযম ও দায়িত্বশীল বক্তব্য ও মন্তব্য আশা করছি। অবিলম্বে তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিভ্রান্তমূলক ও অসত্য মন্তব্য এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সব ধরণের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ ও আদর্শিকভাবে ভিন্ন মতালম্বীদের দমন নিপীড়নে ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের নানান অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। আমরা এ জাতীয় তৎপরতার এখনই পরিসমাপ্তি কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলন চারটি দাবি তুলে ধরেছে সংগঠনটি। দাবিগুলো হল-
১. উগ্র সংগঠন ইসকনের সকল কার্যক্রমা অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. অ্যাডভোকেট শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাসহ ইসকন কর্তৃক সংগঠিত সব অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. আগামী ১৩ ডিসেম্বর খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে ইসকনের সম্মেলন বন্ধ করতে হবে।
৪. ভারতীয় মিডিয়ার বাংলাদেশ বিরোধী মিথ্যা প্রচার বন্ধ না করলে ভারতীয় সকল চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশ থেকে বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানানো হচ্ছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.