ইউরোপের অনৈক্য ফুটিয়ে তুলেছে জিনপিংয়ের সফর

 

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি ইউরোপ সফর করেছেন। ফ্রান্স দিয়ে সফর শুরু করে সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি গিয়েছিলেন তিনি।
ফ্রাঙ্কফুর্টের গ্যোয়েটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও চীনা পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞ ব্যারট্রাম লাঙ বলেন, ইউরোপের ঐ তিন দেশের সঙ্গে বেইজিংয়ের ‘বিশেষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক’ রয়েছে। চীনা নেতৃত্ব ইউরোপকে ক্রমে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে বলে মনে করেন তিনি, যার একপক্ষে আছে চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা দেশগুলো। অন্যপক্ষে, ততটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই, সেইসব দেশ আছে।
চীনা প্রেসিডেন্টের এবারের সফরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন লাঙ।
ফ্রান্সে দুইদিনের সফর দিয়ে ইউরোপ সফর শুরু করেন চীনা প্রেসিডেন্ট। ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে জিনপিং আগ্রহী হলেও ইউরোপীয় ঐক্য দেখাতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনকেও প্যারিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলে ম্যাখোঁ। তবে শলৎস যাননি। অবশ্য চীনা প্রেসিডেন্টের ফ্রান্স সফরের আগে ২ মে একসঙ্গে বৈঠক করেছিলেন শলৎস ও ম্যাখোঁ।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে চীনের সমর্থন দেয়া এবং কমদামি চীনা ইলেক্ট্রিক গাড়িতে ইউরোপের বাজার ছেয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপ। ইউরোপীয় কমিশন সম্প্রতি ইউরোপে রপ্তানি করা চীনা ইলেক্ট্রিক গাড়ি ও সৌরপ্যানেল তৈরিতে ভর্তুকি দেওয়া হয় কিনা, তা তদন্ত করে দেখার ঘোষণা দিয়েছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তি হিসেবে এসব পণ্যের উপর শুল্কও বসানো হতে পারে।
ফ্রান্সে বৈঠকের সময় লাইয়েন জিনপিংকে বলেন, অর্থনীতি রক্ষায় ইউরোপ কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকবে না।
জিনপিংয়ের সফরের আগে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ইউরোপের ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের’ সমর্থনে কথা বলায় ম্যাখোঁর প্রশংসা করা হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে চীন সফর শেষে ম্যাখোঁ তাইওয়ান নিয়ে সংকটে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনায় ইউরোপের অংশগ্রহণের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হওয়া মানে ওয়াশিংটনের ‘বাহন’ হওয়া নয়।
ইউরোপীয় সংসদের সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা সুজা আনা ফ্যারেন্সি বলেন, সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না হলেও বেলগ্রেড সফর করে জিনপিং দেখাতে চেয়েছেন তিনি ‘শুধু ইইউতে নন, ইইউর প্রতিবেশীদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব’।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় সার্বিয়া অনেক ঋণ পাচ্ছে। ঋণের টাকায় হাঙ্গেরি ও সার্বিয়ার মধ্যে একটি দ্রুতগতির রেললাইন নির্মিত হওয়ার কথা।
ইইউ সদস্য হাঙ্গেরি রাশিয়ার প্রতি তার সমর্থনের কথা গোপন রাখেনি। এছাড়া চীনের বিরোধিতা করে ইইউর করা বিভিন্ন প্রস্তাবেও কয়েকবার ভেটো দিয়েছে হাঙ্গেরি। ইউরোপের বাজারে চীনা ইলেক্ট্রিক গাড়ি ছেয়ে যাওয়া নিয়ে ইউরোপের উদ্বেগের মধ্যেই হাঙ্গেরিতে চীনা গাড়ি তৈরির কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা হচ্ছে। এই অবস্থায় ১ জুলাই থেকে ইইউর সভাপতি দেশ হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছে হাঙ্গেরি। জিনপিং আশা করছেন, ইইউ-চীন সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবে হাঙ্গেরি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফ্যারেন্সি বলছেন, চীনের সামগ্রিক কৌশল হলো ‘ইইউর ঐক্যকে ক্ষুণ্ন করা’ এবং ইইউর বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাদাভাবে সম্পর্ক বাড়ানো। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.