বিটিসিআন্তর্জাতিকডেস্ক: ইউক্রেনে আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে এবার ইউরোপে শীত হতে পারে মৃদু। এর ফলে ইউক্রেনে কঠোর শীত পরিস্থিতিকে নিজের সুবিধায় ব্যবহার করার জন্য যে পরিকল্পনা করছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তা ভেস্তে যেতে পারে।
দুই সপ্তাহ আগে এক রুশ রাজনীতিক রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ক্রেমলিন হয়ত ইউক্রেনের জ্বালানি সরবরাহে আঘাত করতে পারে। এতে বেসামরিকরা শীতে ঠান্ডায় এবং ক্ষুধায় ভুগবে।
অক্টোবরজুড়েরাশিয়া ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামোতে আক্রমণ জোরদার করেছে, ইউক্রেনীয় বিদ্যুৎ গ্রিডকে নিশানা করে দেশটিকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের পানির সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে শীত যত এগিয়ে আসছে নতুন খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, শীতকালকে ব্যবহার করে রাশিয়া সুবিধা নেওয়ার যে পরিকল্পনা করছিল তা হয়ত সে অনুসারে হবে না।
গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যম ভিসেগ্রাদ একটি পূর্বাভাস টুইট করেছে। পোল্যান্ডের আবহাওয়া ও পানি ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউট-এর সেন্টার ফর নিউমেরিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন এই পূর্বাভাস জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এবার ইউরোপে মৃদু শীত দেখা দিতে পারে।
ভিসেগ্রাদ টুইটারে লিখেছেন, এতে করে পুতিনের জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার ও মুল্যবৃদ্ধিসহ হাইব্রিড যুদ্ধ কৌশলকে বাতিল করে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, মৃদু শীতকাল হলে ঠান্ডা থাকবে। তবে যে তাপমাত্রা থাকবে তা ইউক্রেনীয়দের নৈতিকতায় ধ্বস নামানোর যে লক্ষ্য পুতিন অর্জন করতে চাইছেন, সেটিকে খুব কম সহযোগিতা করবে।
ওবেস্টার ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সহকারী অধ্যাপক ড্যানি বেলো বলেছেন, উত্তর-পূর্ব, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ ইউক্রেনে ভূখণ্ড হারাচ্ছে রাশিয়া। রুশ সেনারা এসব এলাকায় ইউক্রেনীয়দের নৈতিকতা গুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে রাশিয়ার ধারাবাহিক আক্রমণের পরও এমন প্রচেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
ড্যানি বেলো বলেন, ইউক্রেনীয় অবকাঠামোর ক্ষতি পানি ও বিদ্যুতের ঘাটতি এবং উষ্ণতার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিমান হামলা চলমান রয়েছে। প্রশ্ন হলো: রাশিয়া কি ইউক্রেনকে পিছু হটতে বাধ্য করতে পারবে? এর উত্তর হলো না, শীতকাল যত ভয়াবহ হোক না কেন ইউক্রেন হার মানবে না।
আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির আরবান ক্লাইমেট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মাতেই জর্জেসকু বলছেন, ইউক্রেনীয় বেসামরিকরা শীতল তাপমাত্রায় ভুগবে। সেখানকার বাস্তবতা হলো সূর্যের আলো কমে যাবে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শীত থাকবে। হয়ত তাদের নির্মম শীতের মুখে পড়তে হবে না। কিন্তু বেসামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতি পাল্টাবে না।
আকুওয়েদার-এর পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনের এবারের শীত শুরুতে মৃদু থাকবে এবং ধীরে ধীরে প্রায় স্বাভাবিক তাপমাত্রার দিকে এগিয়ে যাবে। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে বায়ু কিছু মাত্রায় শীতল থাকতে পারে। শীতকাল যদি সংক্ষিপ্ত ও কম ভয়াবহ হয় তাহলে তাপমাত্রা প্রায় স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকার সুযোগ রয়েছে। বেসামরিকদের অতিরিক্ত পোশাক লাগবে বিশেষ করে যদি বিদ্যুৎ না থাকে।
সোমবার কিয়েভসহ বেশ কয়েকটি শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিভিন্ন স্থানে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। তবে ড্যানি বেলো বলছেন, তাপমাত্রা যদি হিমশীতলও হয় তা থেকে রাশিয়ার সুবিধা লাভের বিষয়ে সংশয় রয়েছে। শীতল আবহাওয়া রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে আরও সফল করে তুলবে না। (সূত্র: নিউজ উইক)। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.