আর্জেন্টিনাকে কাঁদানো জার্মানি বুঝিয়ে দিল, তারা আসছে

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: ব্রাজিলকে কোয়ার্টার ফাইনালে বিধ্বস্ত করে আর্জেন্টিনা উড়ছিল। তাদের বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন আরও উজ্জ্বল হয়েছিল, এটা সম্ভবত আলাদা করে বলে দিতে হয় না। কিন্তু আর্জেন্টিনার সে উচ্ছ্বাস বেশিদিন টেকেনি। সেমিফাইনালেই জার্মানির সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৩-৩ সমতার পর টাইব্রেকারে হেরে বাড়ির পথ ধরতে হয় আর্জেন্টিনাকে।
সেই জার্মানিই শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরছে শিরোপা নিয়ে। ইন্দোনেশিয়ার জাভায় আজ অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে ২-২ সমতার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে জিতেছে জার্মানি। তাতে দুই রেকর্ড গড়া হয়ে গেছে জার্মানির। এক, এই প্রথম অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জিতল জার্মানরা। দুই, গত জুনে অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরোও তো জিতেছিল জার্মানিই, তাতে রেকর্ডটা এই যে, একই বছরে ইউরো ও বিশ্বকাপ জেতা প্রথম অনূর্ধ্ব-১৭ দল জার্মানি!
ফ্রান্সের জন্য আরেকটি বিশ্বকাপ ফাইনাল এল আরেকটি টাইব্রেকারে কান্নার গল্প হয়ে। গত ডিসেম্বরে সিনিয়র দলের বিশ্বকাপে মেসির আর্জেন্টিনা ইতিহাস গড়ার পথে টাইব্রেকারে হারিয়েছিল এমবাপ্পের ফ্রান্সকে। আজ বয়সভিত্তিক দলের বিশ্বকাপেও টাইব্রেকার হয়ে থাকল শিরোপা আর ফ্রান্সের মধ্যে ব্যবধান।
ম্যাচে অবশ্য ফ্রান্সেরই দাপট বেশি ছিল, কিন্তু গ্যারি লিনেকারের বিখ্যাত উক্তি সত্যি করে জার্মানিই জিতে গেল। ‘ফুটবল একটা খেলা যেখানে ২২ জন বলের পেছনে দৌড়ায় আর দিন শেষে জার্মানরা জেতে’ – উক্তিটা ফুটবলপ্রেমী মাত্রই তো জানেন! আজই যেমন, ফ্রান্স বলের দখল রেখেছে ৬৫ শতাংশ সময়ে, কিন্তু ম্যাচে একটা পর্যায়ে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। ২৯ মিনিটে পারিস ব্রুনারের পেনাল্টিতে এগিয়ে যাওয়া জার্মানির, ৫১ মিনিটে বার্সেলোনার যুবদলের খেলোয়াড় নোয়া দারভিশ জার্মানিকে এনে দেন দ্বিতীয় গোল। কিন্তু এরপরই ফ্রান্সের প্রত্যাবর্তনের শুরু।
৫৩ মিনিটে সাইমন বুয়াব্রের গোলে ব্যবধান কমায় ফ্রান্স। এর মধ্যে ম্যাচের গতিপথও ফ্রান্সের ফেরার পথ আরও সহজ করে দিল, ৬৯ মিনিটে মার্ক ওয়াবে লাল কার্ড দেখায় যে জার্মানি হয়ে পড়ে দশজনের দল। বিশ্বকাপ ফাইনালে এগিয়ে থাকার ব্যবধান এক গোলে নেমে আসতে দেখার পর শেষ ২১ মিনিট দশ জন নিয়ে খেলা – চাপটা অনেক বেশিই বটে! ফ্রান্স শেষ পর্যন্ত ৮৫ মিনিটে মাতিস আমুগুর গোলে ফেরে সমতায়।
কিন্তু জার্মানির বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে সমতা ফেরানো মানেও যে মানসিক দক্ষতার পরীক্ষায় এগিয়ে যাওয়া নয়, সেটা তো সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনাও বুঝেছিল, আজ ফাইনালে ফ্রান্সেরও একই অভিজ্ঞতা হলো। মজার ব্যাপার, টাইব্রেকারে আগে শট নিয়ে ফ্রান্স প্রথম দুই শটে বল জালে জড়ালেও জার্মানির প্রথম শটেই মিস! চাপ তো সে সময়ে ঘিরে ধরার কথা জার্মানিকে। কিন্তু জার্মানি এরপর টানা তিন শটে বল জালে জড়াল, অন্যদিকে ফ্রান্স তৃতীয় ও চতুর্থ শটে করল মিস। পঞ্চম শটে আবার ফ্রান্স গোল পেলে টাইব্রেকারে ব্যবধান হয় ৩-৩, তখনো জার্মানির পঞ্চম শট নেওয়া বাকি। কিন্তু জার্মানির পঞ্চম শট নিতে আসা পারিস ব্রুনারই করলেন মিস!
সাডেন ডেথে গড়াল ম্যাচ, সেখানে ফ্রান্সের তিদিয়াম গোমিস শুরুতেই মিস করেন। জার্মানির আলমুগেরা কাবার সাডেন ডেথে নিজেদের প্রথম শটে বল জালে জড়াতেই জার্মানির উল্লাস শুরু। একটা ধারণাও বুঝি ছড়িয়ে গেল সে উদযাপন। সেটা এই যে, গত কয়েক বছরে বিশ্বমঞ্চে জার্মানির সিনিয়র দল তো অবিশ্বাস্যভাবে ধুঁকছে, বয়সভিত্তিক দলের এই সাফল্য হয়তো আবার বুঝিয়ে দিল – জার্মানি আসছে!  #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.