আমেরিকা কি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে?

 

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ায় পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার ওপর দেশটির ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষের আস্থা নেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জো বাইডেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছেন। বাইডেন প্রশাসনের মতে, আমেরিকার জন্য এই অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে আমেরিকা কোয়াড ও অকাসের মতো জোট গঠন করেছে। এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বের কারণে সেখানে প্রভাব বিস্তারে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের।
যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেছে। অস্ট্রেলিয়ার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৫২৫টি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ শতাংশ মহড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশ নিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় পরিচালিত জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৬০.৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে মার্কিন ভূমিকার প্রতি তাদের আস্থা নেই অথবা থাকলেও খুবই কম।
এর প্রধান কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ থেকে এটা স্পষ্ট এই অঞ্চলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ কমানোর কোনো ইচ্ছা ওয়াশিংটনের নেই। আমেরিকা চীনকে হুমকি হিসেবে তুলে ধরে আঞ্চলিক দেশগুলোকে উদ্বেগের মধ্যে রাখা এবং এই সুযোগে সামরিক প্রতিযোগিতা আরও তীব্রতর করা।
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করেছে বহুল আলোচিত অর্থনৈতিক জোট ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ)। এই জোট গঠনের উদ্দেশ্য যতটা না অর্থনৈতিক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। প্রেসিডেন্ট বাইডেন মূলত চীনের অর্থনৈতিক বিকাশকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে চান। অনেকেই একে চীনের বৃহৎ অর্থনৈতিক করিডর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে (বিআরআই) বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। ২০১৩ সালে চীন বিআরআই গঠন করেছিল, এটিকে বেইজিংয়ের বৈশ্বিক শক্তির মহড়া হিসেবে দেখা হয়। অবশ্য বাইডেনের চেষ্টা সত্ত্বেও আইপিইএফ তেমন কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি।
যাইহোক আমেরিকার এ ধরণের নানা পদক্ষেপ স্পষ্টতই অপেক্ষাকৃত এই শান্ত অঞ্চলে নতুন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে। এ ধরণের অশুভ তৎপরতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের মতো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা কাঠামোকেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও মানদণ্ড রয়েছে এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও পারস্পরিক উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য আসিয়ানের গুরুত্ব অপরিসীম।
এই সংস্থার মাধ্যমে আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী হলে বাইরের শক্তি প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে না। পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আঞ্চলিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হবে। এর ফলে পারস্পরিক আস্থা যেমন বাড়বে তেমনি কোনো আঞ্চলিক দেশের সরকারই বিজাতীয়দের পুতুল সরকার হিসেবে ভূমিকা রাখতে উৎসাহ পাবে না। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.