আজকের রাজনীতির চ্যালেঞ্জ নিজেদের সংস্কার করা : মঈন খান

ঢাকা প্রতিনিধি: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান  বলেছেন, সংস্কারের কথা বলছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। খুব ভালো কথা, সংস্কার তো লাগবেই। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিজেরা নিজেদের সংস্কার না করি, তাহলে এই সরকার যত সংস্কার কমিশন ও সংস্কার‌ই করুক না কেন কোনও লাভ হবে না।
তিনি বলেন, আজকের রাজনীতির চ্যালেঞ্জ আমাদের প্রত্যেককে নিজেদের নিজেকে সংস্কার করা। আমাদের জনগণের সেবক হয়ে রাজনীতি করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির নেতা আতিকুর রহমান সালুর স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। স্মরণ সভাটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি)।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়। কিন্তু এ প্রসঙ্গে আমি আপনাদের আরও একটু সতর্ক করে দিতে চাই। ঐক্য করতে গিয়ে আবার নতুন করে যদি বাকশাল করে ফেলি— তাহলে কিন্তু সেই ঐক্যে কাজ হবে না। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাজার হাজার জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচারকে দেশ থেকে হটানো হয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, দেশে গণতন্ত্র ফেরত এসেছে। এই সত্যকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের গণতন্ত্রে রূপান্তরের মাত্র একটি ধাপ আমরা অতিক্রম করেছি, তা হচ্ছে স্বৈরাচারের বিদায়। আরও কঠিন দুটি ধাপ রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপ হলো অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার সম্পাদন করে এ দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে কোটি কোটি মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। তৃতীয় ধাপ হলো নির্বাচিত মানুষের কাছে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক ক্ষমতা হস্তান্তর করা। একটি জনগণের সরকার আসতে হবে। যারা একটি স্বাধীন সংসদ গঠন করবে, যারা সত্যিকার অর্থে প্রতিনিধিত্ব করবে, ডামি বা ভুয়া সংসদ নয়। এ গুরু দায়িত্ব এসে পড়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপরে। সে কারণেই আমরা বলছি— এই সরকারকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছি। আমরা কোনও অবস্থাতেই চাই না, তারা ব্যর্থ হয়। কেননা, এই সরকার ব্যর্থ হলে তা শুধু তাদের ব্যর্থতা হবে না। সেটা হবে সমগ্র জাতির ব্যর্থতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সামাজিকভাবে তারা (সরকার) কিভাবে এই গুরুদায়িত্ব পালন করবে। আমি নীতিগতভাবে তিনটি কথা বলবো। তিনটি অস্ত্র আমাদের হাতে রয়েছে। এক রাজনীতি, দুই কূটনীতি, তিন গণমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তি। আমি বিশ্বাস করি, যদি বাংলাদেশের মানুষ ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার— এই তিনটি অস্ত্র সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। শুধু ঐক্য নয়। ঐক্য ও বৈচিত্র্যে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আতিকুর রহমান সালুর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, একটি নাম আতিকুর রহমান সালু, একটি প্রতিবাদ আতিকুর রহমান সালু। এই মানুষটিকে কেন এতদিন আমরা স্মরণ করিনি। আজ তার মৃত্যুর এক বছর পর আমরা এখানে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। দ্য ডেমোক্রেটিক গভর্নমেন্ট অব ইস্ট বেঙ্গলের ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন সালু। ইতিহাস সবসময় মানুষের ওপর সুবিচার করে না। পরবর্তী জীবনে তিনি নতুন করে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ২০০৫ সালের ৫ মে দ্বিতীয় ফারাক্কা লংমার্চ করেছিলেন। তার সমগ্র জীবন আবর্তিত হয়েছে এই দেশের কল্যাণে।
স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক  সাইফুল হক, আইএফসি সভাপতি অধ্যাপক জসীম উদ্দিন আহমেদ, আইএফসির চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান, সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার, আইএফসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ড. নাজমা আহমেদ, সাবেক এমপি জহিরুদ্দিন স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এফ কে এমদাদ খান, বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূইয়া প্রমুখ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মো. লিটন চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.