রহমান উজ্জ্বল:আওয়ামী গোষ্ঠীর ভারত প্রেম সর্বজন স্বীকৃত একটা বিষয়। দেশে-বিদেশে এটা ওপেন সিক্রেট। আওয়ামী লীগের তীর্থভূমি, গুরু ,ঈশ্বর -সবকিছুই যেমন ভারত, তেমনি চাণক্য ভারতের এক প্রিয় শিষ্য হলো আওয়ামী লীগ । ভারত কখনোই আমাদের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বকে সম্মান করেনি। আমাদের পতাকা ,মানচিত্রকে শ্রদ্ধা করেনি।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্থাৎ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এর মাত্র কয়েকদিন আগে ভারতীয় সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেয়। বাংলাদেশে এসেই ভারতীয় সৈন্যরা যুদ্ধের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দৌড়িয়ে মারতে মারতে, পাকিস্তানি সেনাদের ঢাকার উপকণ্ঠে তাড়িয়ে নিয়ে এসেছে। এ সময় ভারত যুদ্ধে সরাসরি যোগ দেয়। যখন পাকিস্তানি সৈন্য দল সবদিক থেকে তাড়া খেয়ে ঢাকামুখী- মুক্তিযুদ্ধের এই তুমুল সময়টাতে যুদ্ধের সম্মুখ সারিতে থাকতো এদেশের সন্তানরা। ভারতীয়রা থাকতো সারিতে।
একটা কথা তেতো হলেও সত্যি, যা ইদানিং বাংলাদেশের মানুষ বলাবলি করে, ভারত তার নিজের স্বার্থেই স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বে সমর্থন দিয়েছিল। একটি অখণ্ড পাকিস্তান ভারতীয়দের জন্য দুঃস্বপ্নের মত ছিল। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ কলোনী থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দেশ দুটি পরস্পর শুধু শত্রু ভাবাপন্ন আচরণ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানর পর থেকেই দেশ দুটি সংঘর্ষ বা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বহুবার। একে অপরকে ভাঙার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের নিরন্তর হঠকারিতা, পুর্ব পাকিস্তানের সম্পদ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানকে সমৃদ্ধ করার বিষয়টিতে এদেশের মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মুসলমান সমাজ হতাশ হয়। ‘লড়কে লেয়েংগা’ যে পাকিস্তান, সেই দেশের অপর অংশের নেতাদের ডাকাতের মতো লুণ্ঠনে মাওলানা ভাসানীর মত মজলুম নেতারা গর্জে উঠতে থাকে তখন।
কেউ স্বীকার করুক আর না করুক ,এই ভূখণ্ডের মানুষগুলো প্রাচীনকাল থেকেই ঝড়ঝঞ্ঝার সাথে লড়াই করে করে অভ্যস্ত এবং স্বাধীচেতা। এই ভূখণ্ডের শাসকরা স্বীকৃত বা অস্বীকৃতভাবে বেশিরভাগ সময়ই স্বাধীন থেকেছে। সুলতানদের কেউ কেউ বাংলাদেশের সীমানাকে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনের ধরন এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপর কর্তৃত্বসুলভ মনোভাব ও আচরণ দেখে দূরদর্শী রাজনীতিবিদ মাওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারি সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে” আসসালামু আলাইকুম” বলে বিদায়ের সংকেত দেন। অচিরেই পাকিস্তানের প্রতি মোহভঙ্গ হয় এদেশের বঞ্চিত মানুষের। তারা কথা বলতে শুরু করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার উপর আঘাত আসলে প্রথম থেকেই পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে এই অঞ্চলের মানুষ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ- এ ভূখণ্ডের মানুষের স্বাধীনচেতা মনোভাবের ফসল বললেও ভুল হবে না। এবং এটা অনিবার্য ছিল। ১২ শত মাইল দূরত্বের দুটি দেশ শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে কখনোই একসাথে চলা সম্ভব না। কিন্তু উপমহাদেশের তৎকালীন নেতৃবৃন্দ এবং ব্রিটিশরা মিলে এটা করেছিল। অবশ্য কোথাও কোথাও গন ভোটের ব্যবস্থা রেখেছিল ব্রিটিশরা। যদিও ভারত পরবর্তীতে উপমহাদেশে সেসব অঞ্চল বা প্রদেশ দখল করে নেয়। পাকিস্তানও কাশ্মীরের বড় একটা অংশ দখল করে । যা আজাদ কাশ্মীর নামে পরিচিত।
পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের অপশাসন, লুটপাট, ও কর্তৃত্বসুলভ আচরণে খুব শীঘ্রই পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশে একটি জাতীয়তাবাদী চেতনা গড়ে উঠে। যার গোড়াপত্তন করেন মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী। মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হন, এ ধরনের অচল রাষ্ট্র কাঠামো কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
পাকিস্তানকে বিভক্ত করতে অতি উৎসাহি ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে কখনোই সম্মান করেনি। বরং এদেশে তাদের পে এজেন্টদের দ্বারা এমন সব ন্যারোটিভ সৃষ্টি করেছে যে – ভারত ছাড়া এদেশের স্বাধীনতা কখনোই সম্ভব হতো না। অথচ ভারত যখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করে ততদিনে আমাদের দামাল ছেলেরা রাজধানী ঢাকাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে।
স্বাধীনতার শুরু থেকেই ভারত আমাদের স্বাধীনতা কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয় আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে। ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে উপস্থিত থাকতে দেয়া হয়নি। দুইবার বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করলে দুইবারই তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ করে ভারতীয় জেনারেলদের কাছে। পাকিস্তান শেখ মুজিবকে মুক্ত করে দিলে শেখ মুজিব ভারত হয়ে তারপর বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
মুক্তিযুদ্ধের পর পর হাজার হাজার ট্রাক- মালবাহী ট্রেন মূল্যবান জিনিসপত্রে ঠাসা হয়ে ভারতে যায়। এই ট্রাকগুলোকে তল্লাশি করার সাহস করত না কেউ তখন। ভারত যুদ্ধের ক্ষতিবরণ স্বরূপ তৎকালীন সময়ের ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি করায়ত্ত করে। শেখ মুজিবকে থোড়াই-কেয়ার করে ভারত ফারাক্কা বাধ চালু করে। মূলত স্বাধীনতার ৫৩ বছর ধরেই থেমে নেই বাংলাদেশকে পদানত রেখে ভারতের স্বার্থ হাসিলের চক্রান্ত।
ভারত কখনোই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মানের চোখে দেখেনি এবং সম্মান করেনি। বন্ধুত্বের কথা বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও বাস্তবে তার উল্টো চিত্রটাই দেখা যায়। সুপ্রতিবেশী সুলভ বন্ধুত্বের পরিবর্তে ভারত বাংলাদেশে প্রভুত্ববাদ কায়েমে তৎপর। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে ভারতের বিশ্বস্ত পার্টনার হল আওয়ামী লীগ। যে জন্য তারা বাংলাদেশে যে কোন পন্থায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে তৎপর। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি হলো- রাষ্ট্র টু আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র নয়।
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হলে ভারত তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে আশ্রয় দেয়। হাজার হাজার আওয়ামী লীগারকে আশ্রয় দেয়। কথিত আছে ,ভারতে অবস্থানকালীন সময়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ দ্বারা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হয় ভারতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে টেলিফোন করে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফেরার ব্যাপারে। আর শেখ হাসিনা দেশে ফেরার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই দেশে-বিদেশি ষড়যন্ত্রে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণ করেন।
আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ছিল মূলত মনিব- ভৃত্তের। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার বিনিময়ে এ সময় আওয়ামী লীগের সামান্য ক্ষমতাও ছিল না দেশের পক্ষ নিয়ে ভারতের বিপক্ষে কথা বলার। দেশের জনগণের বিপক্ষে গিয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এ সময় অন্ধের মত ভারতকে অনুসরণ করে। ভারত নির্দেশিত মতাদর্শই ছিল এ সময়কার বাংলাদেশী পররাষ্ট্রনীতি।
আওয়ামী রেজিম ও ভারতীয়রা মিলে এ সময় অনেকগুলো চুক্তি করে ,যা সুস্পষ্টভাবে দেশ বিরোধী। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ। আর গোপন চুক্তিগুলোর বিষয়ে দেশবাসীকে রাখা হয় পুরোপুরি অন্ধকারে। এসব চুক্তির কমিশন হিসাবে শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগের লোকেরা ভারতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করে।
দেশের ভেতর দিয়ে সড়ক ও রেল ট্রানজিট প্রদান , কক্সবাজারে ভারতীয় পর্যবেক্ষণ রাডার বসানো, বন্দর ব্যবহারে বিশেষ সুবিধা প্রদান- এরকম অসংখ্য কাজ বা চুক্তি বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের স্পষ্ট প্রমাণ। অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও আইনের তোয়াক্কা করেনি। নদীগুলোকে পানি শূন্য করে ভারত বাংলাদেশকে মরুময় করার এক ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত গার্মেন্টস সেক্টরকে ধ্বংস করার ভারতীয় প্রচেষ্টার বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগ কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয় নাই। এ সময় দেশীয় শিল্পখাতকে ধ্বংস করে দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাড়া -মহল্লা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয় সব ধরনের ভারতীয় পণ্য। মূলত চাণক্য নীতি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও স্বাধীনতাকে পদানত রেখে ২০ কোটি মানুষের একটি উর্বর বাজার তৈরি করাই ছিল ভারতের লক্ষ্য।
সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। বিগত ৫৩ বছরেও যার কোন কার্যকর স্থায়ী সমাধান হয়নি। যা ভারতের কর্তৃত্ববাদ ও ঘৃণ্য আচরণের প্রকাশ। সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশীদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে ক্ষোভ তৈরি হলেও এ ব্যাপারে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ও ভারতের সরকার নির্বিকার থেকেছে সবসময়।
বরাবরই বর্ষাকালে ভারতীয় পানির বাঁধগুলো ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দেয়া হয়। এতে প্রতি বছর বাংলাদেশে ব্যাপক জান-মালের ক্ষতি হয়। সামান্য কারণে ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের হত্যা করা হয়। এসব দৃশ্য বাংলাদেশী মুসলিম উম্মাহকে বারবার ব্যতীত করে। ক্রিকেট খেলার মত বিনোদনমুলক বিষয়েও যখন ভারতের নাগরিকরা প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং বাংলাদেশীদের গালাগালি করে তখন প্রতিক্রিয়া হিসাবে ভারতীয় সরকারের পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকদের নিয়েও এদেশের জনগণ কথা বলতে বাধ্য হয়েছে । বিশ্ব সূচকে বহু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের চেয়ে এগিয়ে। এটাও ভারতীয়রা ভালোভাবে নেয় না। এটা দুই দেশের জনগণের মধ্যে একটা অদৃশ্য ফাটল তৈরি করে। এছাড়া ভারতীয় দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদদের বাংলাদেশ নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে দেয়া বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আঘাত হানে। যা কোন সভ্য দেশের পক্ষ থেকে কাম্য নয়। যে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ভারতীয়রা অহংকার ও চিল্লাপাল্লা করত; সেগুলো আজ বাংলাদেশি রোগীর অভাবে বন্ধ হতে চলেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশীরা না যাওয়ায় পশ্চিমবাংলার অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা লেগেছে ।ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের ধারণা, যে ধাক্কা সইতে হবে সর্বভারতীয় অর্থনীতিকেও।
ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ছোট একটা দেশ হলেও- বাংলাদেশ ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার যোগানদাতা প্রধানতম দেশগুলোর একটা। বাংলাদেশে ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ করে গার্মেন্টস সেক্টরে। বাংলাদেশে উৎপাদিত অনেক পণ্যের কাঁচামালের প্রধান যোগানদাতা ভারত। কিন্তু ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের অথর্ব পররাষ্ট্রনীতি কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে দুটি দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য বিষয়গুলো। হাসিনার মতো ভারত প্রিতি থেকে বেরিয়ে এসে ডক্টর ইউনুস এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুঁজে নিচ্ছে নতুন নতুন বাজার। তৈরি করছে বিকল্প বাজার ব্যবস্থা।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার জন্য এত অন্যায়- অবিচারের পরও বহকাল এদেশের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলেনি কিন্তু চিত্রপটটা ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে। বিশেষ করে ২০২৪ এর তথাকথিত জাতীয় নির্বাচনের পর। এ সময় রাজনীতিবিদ, এক্টিভিস্ট ও নাগরিকদের একটা অংশ ভারত ও ভারতীয় পন্য বর্জনের ডাক দেয়। ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য ভারত বাদ দিয়ে অন্য দেশকে বেছে নেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে। প্রবাসী সাংবাদিকরা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্লাটফর্মে তুলে ধরে তাদের অপরতরতা ও নিষ্ঠুরতা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ঐদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করে। এতে বিশ্বব্যাপী ভারতের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নাগরিকদের বিরামহীন অত্যাচারের ফলে ছাত্র-জনতা যখন গণভবন আক্রমণ করে তখন পৃথিবীর কোন দেশ হাসিনাকে আশ্রয় না দিলেও ভারতে সে ঠিকই আশ্রয় পায়। ভারতে বসেই সে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করতে থাকে। আর এতে শেখ হাসিনার সাথে যোগ হয় ভারতের কিছু ভাওতা মিডিয়া। যারা অনবরত হাস্যকর কিছু তথ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে হাস্যকর প্রমাণিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা ও তার অনুগত লোকদের দানব হয়ে ওঠার পেছনে ভারতের এই নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থন অবশ্যই অনেকাংশে দায়ী। জনগণকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ভারতকে জাপটে ধরেই বাঁচতে চেয়েছে। এটা তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। ক্রমাগত অন্যায়ের ফলে অনেক আওয়ামী লীগার এ সময় আওয়ামী লীগের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যা তাদের পতনকে ত্বরান্বিত করেছে। অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতিতে বন্ধুহীন ভারত বাংলাদেশে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক রাখতে চেয়ে বাংলাদেশের জনগণের সাথে দূরত্ব তৈরি করেছে।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ ও ভারতের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের কথাবার্তা শুনলে যা স্পষ্ট হয়। এরকম চলতে থাকলে আধুনিক বিশ্বের রাজনীতিতে কোন দেশের জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। লেখা শেষে, ভারতকে তার বাংলাদেশ সম্পর্কিত পুররাষ্ট্রনীতি নিয়ে পুনরায় ভাবতে এবং গবেষণা করতে অনুরোধ করছি – প্রতিবেশী দেশের নাগরিক হিসেবে । কারণ, প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.