অলিম্পিকেরও দ্রুততম মানব ‘নেকড়ে’ লাইলস

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: অলিম্পিকে ছেলেদের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট শেষ হতে ১০ সেকেন্ডও সময় লাগে না। কিন্তু গতকাল প্যারিসে সেই দৌড় শেষে বিজয়ীকে খুঁজে বের করতে সময় লাগল ৩০ সেকেন্ডেরও বেশি।
অপেক্ষার পালাটাকে এতটাই দীর্ঘ মনে হয়েছিল যে জ্যামাইকান স্প্রিন্টার কিশানে টম্পসন তো ক্যামেরার সামনে অধৈর্য হয়ে ‘কাম অন’ও বলে ফেললেন। অবশেষে যখন চ‚ড়ান্ত ফলটা এলো, টম্পসন নন বিজয়ীর হাসিটা হাসলেন নোয়াহ লাইলস।
গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে অ্যাথলেটিকস বিশ্বে নতুন তারকার আবির্ভাবের ঘোষণা দেওয়া লাইলস দ্রুততম মানব হলেন অলিম্পিকেও। টম্পসনের চেয়ে ০.০০৫ সেকেন্ড এগিয়ে থেকেই ২০০৪ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রকে ছেলেদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রথম সোনা এনে দিলেন লাইলস।
ফটো ফিনিশে চ‚ড়ান্ত বিজয়ী ঘোষণার আগে দুজনরেই টাইমিং দেখাচ্ছিল ৯.৭৯ সেকেন্ড। ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং করেও তাই অপেক্ষা করতে হয়েছে লাইলসকে। ফটো ফিনিশে বিজয়ী ঘোষণার পর দেখা যায় লাইলস সময় নিয়েছেন ৯.৭৮৪ সেকেন্ড, টম্পসনের লেগেছে ৯.৭৮৯ সেকেন্ড। ৯.৮১ সেকেন্ড সময় নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন আরেক মার্কিন স্প্রিন্টার ফ্রেড কার্লি। টোকিও অলিম্পিকের দ্রুততম মানব মার্চেল ইয়াকবস হয়েছেন পঞ্চম।
১৯৮০ সালের মস্কো অলিম্পিকের পর প্যারিসেই সবচেয়ে কম ব্যবধানে নিষ্পত্তি হলো ছেলেদের ১০০ মিটারের সোনার। মস্কোতে ব্রিটেনের অ্যালান ওয়েলস এমন সূক্ষ ব্যাবধানেই হারিয়েছিলেন সিলভিও লেওনার্দকে। তখন অবশ্য সেকেন্ডকে হাজার ভাগ করার প্রযুক্তি ছিল না।
গতকালের দৌড়টা ৯৯ মিটারের হলে অবশ্য লাইলস নন, বিজয়ীর হাসি হাসতে পারতেন টম্পসন। শেষ ১ মিটারেই যে এগিয়ে গেলেন লাইলস। এমন প্রতিদ্বিদ্বতার পর সোনা জিতে নিজের নাম লেখা স্টিকারটি শার্ট থেকে খুলে ক্যামেরাম্যানদে দেখিয়েই পাগলাটে এক উদযাপনে মাতেন। পরে তো স্তাদ দু ফ্রান্সের ট্রাকের পাশে ঘণ্টা বাজাতে গিয়েই পাগলামি করলেন লাইলস।
প্রতিক্রিয়া দিতে এসে লাইলস ও টমসন দুজনেই বললেন, দৌড় শেষের পরের মুহূর্তে দুজনের মধ্যে কী কথা হয়েছিল। টমসন বলেন, ‘লাইলস বলল, হেই কিশানে (টমসন), আমার মনে হয়, তুমিই জিতেছে। আমি তখন বলি, আমি নিশ্চিত নই।’ লাইলসও বললেন একই কথা।
প্রথমবারের মতো অলিম্পিকসে সোনা জয়ের উচ্ছ্বাস নিয়ে বললেন, এর চেয়ে বড় মুহূর্ত চাইতে পারতেন না তিনি, ‘আমি কিশানের (টমসন) কাছে গিয়ে বলি, আমার মনে হচ্ছে তুমি জিতছো। আমি পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম যে, টমসনের নাম ভেসে উঠবে। কিন্তু আমার নাম ভেসে উঠতে দেখে (নিজেকে বললাম), সৃষ্টিকর্তা পরম করুনাময়; আমি অবিশ্বাস্য দৌড় দিয়েছি। এর চেয়ে বড় মুহ‚র্তে চাইতে পারি না। প্রতিটি রাউন্ড ধরে আমি দৌড়েছি এবং প্রথম রাউন্ডের টাইমিং নিয়ে কিছুটা হতাশ ছিলাম। পরে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ফিরলাম… সেমি-ফাইনালে ৯ দশমিক ৮৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড়ালাম।’
প্রতিদ্বন্দ্বীরা কতটা ভালো করেছে সেটির প্রমাণ টাইমিং। ফাইনালে আটজনই যে ১০ সেকেন্ডের কমে শেষ করেছে দৌড়। বৈধ সীমায় থাকা বাতাসের অনুক‚লে আটজনেই ১০ সেকেন্ডে নিচে দৌড়ানোর প্রথম উদাহরণই গড়ল প্যারিস। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বাজিমাত করেই থেমে যেতে চান না লাইলস। সমর্থকদের আরও দারুণ সব মুহ‚র্ত উপহার দেওয়ার প্রত্যয় জানালেন, ‘আমি আশা করি, তোমরা লাইলসকে (নোয়াহ) ভালোবাসবে। কেননা, আরও অনেক কিছু উপহার দিতে যাচ্ছি আমি।’
বুদাপেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বকালের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টের কীর্তি ছোঁয়া লাইলসের সামনে এবার বোল্টের অলিম্পিক কীর্তি ছোঁয়ার সুযোগ। নিজের প্রিয় ইভেন্ট ২০০ মিটার স্প্রিন্টটা যে এখনো বাকি। সেটিতেও সোনা জিতলেন বোল্টের পর প্রথম পুরুষ স্প্রিন্টার হিসেবে ‘ডাবলস’ জিতবেন লাইলস। সেই লাইলস অলিম্পিকের দ্রুততম মানব হওয়ার পর বললেন কতটা ক্ষুধার্ত ছিলেন তিনি, ‘এই পদকটা আমি চেয়েছি, কী কঠিন লড়াই হলো, প্রতিদ্বন্দ্বীরাও অবিশ্বাস্য ছিল। সবাই প্রস্তুত হয়েই এসেছিল আর আমি শুধু এটিই প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম তাঁদের সবার মধ্যে আমি সেই মানুষ, নেকড়ের মধ্যে আমিই সেই নেকড়ে।’ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.