অপরিকল্পীত উন্নয়নে রাজশাহী নগরীতে বাড়ছে যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে 

নিজস্ব প্রতিবেদক: অপরিকল্পীত নগরায়নে রাজশাহী মহানগরীতে বাড়ছে জনদূর্ভোগ। অটোরিক্সার যানজট, অপরিকল্পীত, পরিকল্পনাহীন উন্নয়নে এ জনদূর্ভোগ তীব্র আকার ধারণা করছে।
মূলত ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরুর পর বিকল্প রাস্তা তৈরি না করে পুরো রাস্তা বন্ধ করে দেয়া ও সঠিক পরিকল্পনা অভাবে রাজশাহী নগরবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
যানজট, রাস্তা সংকুলনসহ নানা সমস্যায় নগরনবাসী চরম ভোগান্তির শিকার হলেও রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলোর দিকে নজর দিচ্ছে না। সড়কে যানবাহনে শৃংখলা হারিয়েছে অনেক আগেই।
ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও এ থেকে উত্তরণের কোনো পদক্ষেপ নেই রাসিকের। শখের উন্নয়ন এখন নগরবাসীর গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বাড়ছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
জানা গেছে, নগরায়নের জন্য রাসিকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা একনেক বরাদ্দ দিয়েছে। এরমধ্যে প্রায় সাতশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ফ্লাইওভার (ওভারপাস)।
নগরীর কাশিয়াডঙ্গা থেকে বিলশিমলা, সিটি হাট রাস্তা স্ট্যাডিয়াম থেকে ঘোষপাড়া, নগরীর নিউমার্কেট হয়ে রেলগেট দিয়ে মোহনপুর রাস্তার বিমান চত্ত্বর পর্যন্ত এ উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে। যদিও ফ্লাইওভার নির্মাণ নিয়ে নগরবাসীর মনে নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা রয়েছে।
কারণ নগরবাসীর ভাবনায় বর্তমান রাজশাহীর প্রেক্ষাপটে কোনো ফ্লাইওভারের প্রয়োজন নেই। তারপরও রাসিকের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মন ভালো রাখার জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ হচ্ছে। আর এই ফ্লাইওভার নির্মাণেও সাবেক রাসিক মেয়র লিটন শতকোটি অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমন অভিযোগ পুরোনো।
জানা গেছে, অপরিকল্পীতভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে নগরীতে বেড়েছে অসহণীয় যানজট। কারণ বিকল্প রাস্তা তৈরি না করে প্রধান রাস্তা বন্ধ করে ফ্লাইওভারের কাজ চলায় নগরীর মধ্যে ছোট ছোট দিয়ে চলছে যানবহণ। নগরীর বিমানচত্তর থেকে রেলগেট পর্যন্ত পাইলিংয়ের কাজ চলছে। বর্তমান এই কাজ রেল গেট পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে।
গত কয়েকদিন থেকে রেলগেট থেকে নিউমার্কেটের রাস্তায় চলছে পাইলিংয়ের কাজ। কিন্তু রেলগেটের রাস্তা পুরোটা বন্ধ রাখা হয়েছে। রেলগেট থেকে লক্ষীপুরে চলাচল করা যানবাহনের জন্য এক পাশের রাস্তা রাখা হয়েছে। আর কোর্ট স্টেশন, কোর্ট, লক্ষীপুর এলাকা থেকে যেসব যানবাহন রেলগেটে আসছে সেসব যানবাহনের যাত্রী নামানোর কোনো জায়গা নেই। মুল রাস্তায় অটোরিক্সা চালকরা যাত্রী উঠানামা করছে।
বিশেষ করে রেলগেট থেকে নওহাটার রাস্তা পুরোটাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে নওগাঁ, মোহনপুর, নওহাটা এলাকা থেকে যেসব যানবাহন নগরীতে আসছে তাদের উপশহর দিয়ে নগরভবনের সামনে দিয়ে রেল গেটে আসতে হচ্ছে।
একই ভাবে নওগাঁ, মোহনপুর, নওহাটার বাস, অটোরিক্সা চালকরা রেলগেটে যাত্রী তুলে পুনরায় উপশহরের ভেতর দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। উপশহরের রাস্তা ছোট হওয়ার কারণে এসব এলাকায় যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের।
এদিকে প্রথম দিকে ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরু করা হয় কাশিয়াডাঙ্গা থেকে বিলশিমলা পর্যন্ত। এই রাস্তায় কাজ শুরু করার পরও বিকল্প কোনো রাস্তা রাখা হয়নি। যার কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোদাগাড়ী থেকে চলাচলকরা বাস, ট্রাক বা ছোট যানবাহন চালকরা যে যার ইচ্ছেমত ছোট রাস্তায় দিয়ে চলাচল করছে। এতে নগরীর পশ্চিম দিকের রাস্তাগুলোতে যানজট সৃষ্টি হলে আধাঘন্টাতেও দুর হয় না।
এই রাস্তায় ফ্লাওভারের কিছু কিছু পিলার ৫ ফিট করে উঠে গেছে। আবার কোনোটি নিচ থেকে তোলা হচ্ছে। দেখা গেছে, রেলগেট থেকে রাজশাহী-নওগাঁ চারলেন সড়কে ভারি যন্ত্রপাতি দিয়ে ফ্লাইওভারের পাইলিং কাজ চলছে। চারলেন সড়কের মধ্যে সামান্য রাস্তা  রাখা হয়েছে। আর সেই সরু রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে অটোরিক্সা।
বিশেষ করে রেলগেট থেকে নিউমার্কেট যাওয়ার রাস্তার মধ্যদিয়ে পাইলিং করে রাখা হয়েছে। দুই পাশে সামান্য করে রাস্তা রাখা হয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ছোট যানবাহন অটোরিকশা। যার কারণে এই রাস্তায় প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকছে। একই অবস্থা বিলশিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা রাস্তার। এ রাস্তায় পাইলিংয়ের কাজ হয়ে গেছে। এখন চলছে পিলার উঠানোর কাজ। পুরো রাস্তা বন্ধ থাকলেও কিছু কিছু এলাকায় এই রাস্তার পাশে ৫ ফিট জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। ওই ফাঁকা জায়গা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট যানবাহন।
রাস্তায় চলাচল করা যানবাহণের যাত্রী ও চালকরা বলছে, যেসব রাস্তায় ফ্লাইওভার করা হচ্ছে সেসব রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প কোনো রাস্তা রাখা হয়নি। যার কারণে যানবাহন চালকরা যেদিক দিয়ে ইচ্ছে যে যার মত সেদিক দিয়ে চলাচল করছে। এতে নগরীতে যানজট বেশি হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে রাসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমদ আল মঈনের সাথে কথা বলতে তার দপ্তরে গেলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানানো হয়। পরে তার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এব্যাপারে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব) ড. এ.বি.এম. শরীফ উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করা হলে তার দপ্তর থেকে জানানো হয় স্যার মিটিংয়ে আছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.