বিটিসি বিনোদন ডেস্ক: তিন দফায় গল্পটি মানুষের সামনে এসেছে এবং দারুণ সাড়া পেয়েছি। সেখান থেকেই ভাবনা আসে, গল্পটা পর্দায় আনার প্রথমের সমাহার শোবিজে কুসুম সিকদারের পথচলা ২০০২ সাল থেকে। অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন। পেয়েছেন জনপ্রিয়তা ও নানা পুরস্কার।
তবে এই প্রথম হলেন ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ অর্থাৎ পরিচালক। তাও আবার চলচ্চিত্রের। প্রসঙ্গটি তুলতেই কুসুম বললেন, “শুধু প্রথম পরিচালনাই নয়, চিত্রনাট্য, প্রযোজনাসহ অনেক কিছুই প্রথমবার করেছি। এমনকি সম্পাদনা, কালার গ্রেডিং, সাউন্ড ডিজাইন সব কিছুতেই নিজে যুক্ত হয়েছি।
সব মিলিয়ে ছবিটি আমার জন্য স্পেশাল। তাই এটাকে অভিজ্ঞতা বলব না, ‘শরতের জবা’ একটা জার্নি।”
অভিনয়, নাকি পরিচালনা
একদিকে অভিনয়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে পরিচালনায় হাতেখড়ি। দ্বিতীয় কাজটি তুলনামূলক কঠিন হবে, এটাই স্বাভাবিক।
তবে কুসুম সিকদার বিষয়টিকে দেখছেন ভিন্ন চোখে। তাঁর ভাষ্য, ‘সব কাজই কঠিন। অভিনয় অনেক বছর ধরে করছি, এটাতে একটু অভিজ্ঞতা আছে। যদিও আমি মনে করি, অভিনয়ের এক শতাংশও আয়ত্ত করতে পারিনি। আর পরিচালনা, প্রযোজনা এসব শিখছি বলতে পারেন।
ভুল-ত্রুটি হবে, সেটা শুধরে নিয়েই তো এগোতে হবে। এ কারণেই ছবিটি শেষ করতে এক বছরের বেশি সময় লেগেছে। চাইলেই তিন মাসের মধ্যে ছবির কাজ সম্পন্ন করতে পারতাম। কিন্তু আমি চেয়েছি সর্বোচ্চ চেষ্টা ও যত্নে কাজটি করতে।’
গল্প থেকে সিনেমায় ‘শরতের জবা’
কুসুম সিকদার জানালেন, ‘শরতের জবা’ এক একা নারীর জীবনের গল্প। তবে ছবির বিষয়বস্তু আপাতত খোলাসা করতে চান না। ছবির সেই নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন কুসুম নিজেই। তাঁর সঙ্গে আরো আছেন ইয়াশ রোহান, নিদ্রা দে নেহা, জিতু আহসান, বড়দা মিঠু, শহীদুল আলম সাচ্চু প্রমুখ। নিজের পরিচালিত-প্রযোজিত প্রথম ছবিতে নিজেই কেন অভিনয় করলেন? কুসুম বলেন, “এ ক্ষেত্রে আগে বলতে হবে কেন ‘শরতের জবা’ সিনেমায় এলো।
আমার লেখা গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সাত-আট বছর আগে, ডেইলি স্টারের ঈদ সংখ্যায়। পরে আমার প্রথম গ্রন্থ ‘অজাগতিক ছায়া’য় যুক্ত করি এটি। তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে বইটি দুইবার প্রকাশিত হয়েছিল। তো এই তিন দফায় গল্পটি মানুষের সামনে এসেছে এবং দারুণ সাড়া পেয়েছি। সেখান থেকেই ভাবনা আসে, গল্পটা পর্দায় আনার।
প্রথমে ভেবেছি নাটক বা টেলিছবি করব। পরে ভাবলাম, পরিচালনা যেহেতু করব, বড় পরিসরেই করি। ছবির প্রধান দুই নারী চরিত্র জবা ও বেলী। তো বেলীর জন্য অভিনয়শিল্পী খুঁজতেই অনেক সময় লেগে যায়। এর মধ্যে শুটিং শিডিউল ঘনিয়ে আসে। অগত্যা মনে হলো, যেহেতু গল্পটা আমারই লেখা, আমি চরিত্রটিকে ভালোভাবে জানি, নিজেও তো অভিনয় করতে পারি। তাই অভিনয় করা।”
থেমে থাকা চলবে না
রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক দিন ধরে দেশে নতুন ছবি মুক্তি বন্ধ। দর্শকও কিছুটা বিনোদনবিমুখ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ‘শরতের জবা’ প্রেক্ষাগৃহে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেন কুসুম। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘দেখুন, সব কাজ কিন্তু চলছে। থেমে থেমে হোক বা স্বল্প পরিসরে সব সেক্টরের কাজই চলছে। তাহলে আমরা বসে থাকব কেন? চলচ্চিত্রের সঙ্গে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। সুতরাং থেমে থাকার সুযোগ নেই। আর সবাই যদি থেমেই থাকে, তাহলে তো দেশই থেমে যাবে।’
নতুন মিউজিক্যাল ফিল্ম
গানেও পারদর্শী কুসুম সিকদার। একক অ্যালবাম ‘তুমি আজ কত দূরে’ এবং একাধিক মিশ্র অ্যালবাম ও সিঙ্গেল গানে তাঁর গায়কি শুনেছেন অনেকেই। গায়িকা কুসুমকে ফের কবে পাওয়া যাবে? “নতুন একটি গান প্রস্তুত—‘মরীচিকা মায়া’। এটা মিউজিক্যাল ফিল্ম হিসেবে আসবে। মিউজিক ভিডিও বলছি না। কারণ এর দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৮ মিনিট। মিউজিক্যাল ফিল্ম হিসেবেই এটি বানানো হয়েছে। ‘শরতের জবা’র জন্য গানটির প্রকাশনা স্থগিত রেখেছি। আশা করছি ছবি মুক্তির কিছু দিনের মধ্যেই গানটিও প্রকাশ করব”—জবাব দিলেন কুসুম সিকদার।
নিজ পছন্দে অভিনয়
প্রায় ছয় বছর হলো ‘শরতের জবা’ ছাড়া অভিনয় করেননি কুসুম। এই স্থবিরতা জারি রাখবেন, এমন নয়। নিজের পছন্দসই কাজ পেলে তবেই করবেন। কুসুম বলেন, ‘ইদানীং অনেক ওটিটি প্রজেক্টের প্রস্তাব আসে। ভালো গল্প, কঠিন কঠিন চরিত্র। আমি তো ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই কঠিন চরিত্র করে এসেছি। সুতরাং আমার কাছে কেউ মন্দ গল্প নিয়ে আসেন না। কিন্তু আমি শুধু ভালো গল্প হলেই কাজ করি না। নির্মাতা, সহশিল্পী, শুটিং টিম, লোকেশন অনেক কিছু বিবেচনা করি। সব কিছু মিলিয়ে যদি মনঃপুত হয়, তাহলে অভিনয় করব।’ #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.