অনুরোধ নোটিশ কোনটিই মানেননি: পৌর সদরের গুরুত্বপূর্ণ চার সড়কের কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার

নাটোর প্রতিনিধি: সড়ক সংস্কার করতে গিয়ে খোয়া ও বালু বিছানো হয়েছে প্রায় বছরখানেক আগে। এরপর আর কোনো কাজ হয়নি। কাজ ফেলে নিরুদ্দেশ হয়েছেন ঠিকাদার। ফলে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীকে।
নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ চারটি সড়কের সংস্কার কাজে হয়েছে এমন পরিস্থিতি। অথচ কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে অনুরোধের পর নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি তা কর্ণপাত করছেন না।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না এই ঠিকাদার আব্দুল মান্নাফ।
পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের বারইপাড়া সড়কের ৫৭৫ মিটার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাছিমপুর সড়কের ১০৫ মিটার, ৬নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষণহাটি সড়কের ৮৩ মিটার এবং ৫নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপাতিল সড়কের ৬২ মিটার জীর্ণ্য সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয় পৌরসভা। ৮২ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দে চারটি সড়কের ৮২৫ মিটার সংস্কারের কাজটি পায় মেসার্স আব্দুল মান্নাফ নামের বাগাতিপাড়ার স্থানীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত বছরের মে মাসে এসব সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করেছিলেন ঠিকাদার। সেসময় চলাচলের অনুপযোগী সড়কগুলোর পিচ তুলে খোয়া বিছানো হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংস্কার কাজগুলো শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারি আব্দুল মান্নাফের কাজ শেষ করার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সংস্কারের নামে খানা খন্দের সড়কগুলোয় খোয়া বিছানো হলেও পিচঢালা হয়নি। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার সেসব খোয়াও সরে গিয়ে সড়কে বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় খোয়ার ওপর শ্যাওলা জমে পিচ্ছিল হয়েছে সড়ক। ফলে ধীর গতিতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।
বাগাতিপাড়া বি.এম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সামসুন্নাহার সীমা বলেন, ঠিকাদার যে চারটি সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করেছিলেন তার মধ্যে তাদের চলাচলের একটি সড়ক রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী স্বস্তি ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু খোয়া বিছানোর পর দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় গ্রামের লোকজনের চলাচলে ভোগান্তি শুরু হয়েছে। সড়কটিতে পিচঢালার জন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন।
পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপতিল এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান ও সালাউদ্দীন বিটিসি নিউজকে বলেন, সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ায় ধুলোয় নাকাল শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা। তাছাড়া জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইউসূফ আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, সড়কের নাজুক পরিস্থিতে তারা দুর্ভোগে আছেন। কাজটি তার সময়ে হওয়ায় স্থানীয় লোকজন তাকেও গালমন্দ করছেন। ভাঙাচোরা সড়কটি পাকা করণের জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তবে ঠিকাদার আব্দুল মান্নাফ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বিটিসি নিউজকে বলেন, কিছু সমস্যার কারণে কাজটি শেষ করতে সময় লাগছে। ঈদের পর তিনি চারটি সড়কের কাজ শেষ করে দেবেন।
বাগাতিপাড়া পৌরসভার অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর এসব সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বলার পরও ঠিকাদারের কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেনা। চুক্তি বাতিল করে পুনরায় দরপত্র দিয়ে কাজটি শেষ করার বিষয়টি চিন্তা করা হচ্ছে।
বাগাতিপাড়া পৌরসভা প্রশাসক সুরাইয়া মমতাজ বিটিসি নিউজকে বলেন, সংস্কার কাজ শেষ না করেই বেশির ভাগ টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। এখন ঠিকাদারের সাঙ্গে যোগাযোগ করে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। নোটিশও দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঠিকাদারকে কালোতালিকাভুক্ত করার কথা জানান তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.